ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫ , ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষাদের ঈদে শহীদ রাকিবের কবরের পাশে বাবা-মা ও ভাইয়ের কান্না-বিলাপ

বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট সময় : ২০২৫-০৪-০১ ২৩:৫৭:৪১
বিষাদের ঈদে শহীদ রাকিবের কবরের পাশে বাবা-মা ও ভাইয়ের কান্না-বিলাপ বিষাদের ঈদে শহীদ রাকিবের কবরের পাশে বাবা-মা ও ভাইয়ের কান্না-বিলাপ


রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি॥ ঈদের আনন্দ বিষাদে রূপ নেয় বরিশালের বানারীপাড়ার জম্বদ্বীপ গ্রামের জুলাই গণঅভূত্থানে শহীদ রাকিবের পরিবারে। তাকে হারানোর শোকস্মৃতিতে ডুবে আছেন বাবা-মা-ভাইসহ আত্মীয়-স্বজন। প্রতিবছর বাবা-মা-ভাইসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতো রাকিব। গত বছরও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বাজার জামে মসজিদে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

এবার রাকিবকে ছাড়া সেই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে দিনমজুর বাবা মোশারেফ হোসেন ছেলের কথা মনে পড়তেই কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাৎক্ষনিক সিন্ধান্ত নেন পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায় ছেলের কবরের কাছে চলে যাওয়ার। ঈদের দিন বিকালে বানারীপাড়ার জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে এসে রাকিবের কবরের কাছে গিয়ে বাবা মোশরেফ হোসেন, মা রাশিদা বেগম ও প্রতিবন্ধি বড় ভাই শাকিল কান্না-বিলাপ করেন। তারা রাকিবের কবর জিয়ারত করে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

শোকাহত বাবা মোশারেফ হোসেন ও মা রাশিদা বেগম কান্না বিলাপ করে বলেন, বুকের ধন রাকিবকে হারিয়ে আমাদের জীবনের সব আনন্দ চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। আজ রাকিব বেঁচে থাকলে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতাম।

বাবা মোশারেফ হোসেন বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে পৃথিবীতে ভারি আর কিছু নেই। কিছুতেই এই শোক সইতে পারছিনা। সবার কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।

আল্লাহ যেন ওকে জান্নাতবাসী করেন। নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে রাকিবের (২১) সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গার্মেন্টস-কর্মী রাকিবকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ‘সুখের ঘর’ বেধেছিলেন মা-বাবা হারা মেয়েটি। কিন্তু দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই সব স্বপ্ন-আশা যেন চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের। তিনি হয়ে যান বিধবা। রাকিব নিহত হওয়ার কয়েকদিন পরে জান্নাত চলে যায়।

রাকিবের মা রাশিদা বেগম বলেন, গ্রামে ঘর বানিয়ে আমাদের রাখার স্বপ্ন ছিল ছেলে রাকিবের। গুলির আঘাতে তার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। নানীর কাছে বড় হওয়া অসহায় এতিম মেয়েটাকে ছেলের বউ করেছিলাম। চোখের সামনে বউটা  বিধবা হয়ে যায়। রাকিবকে দাফনের কয়েকদিন পরে জান্নাত তার নানীর সঙ্গে চলে যায়। যাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন বাবা মোশারেফ হোসেন। এদিন রাতেই বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। ২২ জুলাই সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত হওয়ার সাড়ে চার মাস পরে ২৮ নভেম্বর দুপুরে ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রাকিব বেপারীর মরদেহ উপজেলার জম্বদ্বীপ গ্রামের পারিবারিক কবর স্থান থেকে উত্তোলন করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়। পরে আবার একই কবরে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রাকিব।

দিন মজুর বাবা, হার্টের রোগী মা, প্রতিবন্ধী বড় ভাই শাকিল ও নবপরিণীতা স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে ফতুল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামে রাকিবদের কোন ঘর নেই। জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করছেন তার চাচা নুরুল হক। ছেলে রাকিবের মরদেহ নিয়ে মোশারেফ হোসেন ও তার পরিবার গ্রামের বাড়ি ফিরে ঠাঁই নিয়েছিলেন সেই ঘরেই। রাকিব শহীদ হওয়ার পরে তার পরিবার যে দান-অনুদান পেয়েছে তা দিয়ে বাড়িতে ঘর উত্তোলনের জন্য পুকুর ভরাট করে ঘরের ভিটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় রাকিবের নিজ বাড়িতে ঘর নির্মানের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে এখন সেই “স্বপ্নের ঘর” উত্তোলন করা হচ্ছে।

এ বিষয়টিও ছেলে হারানো বাবা-মায়ের কাছে নিদারুন কষ্ট-যন্ত্রনার। 





 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ